॥ মফিজ ইমাম মিলন ॥
চলুন সেখানে চলে যাই। যেখানে পুরান গন্ধমাখা সুদূর শৈশবের হিরন্ময় পৃথিবী। যেখানে ছিল আপনার নল-খাগড়ার রঙিন বাঁশি, মনকাড়া গাব-কাঠের লাটিম, মাটির ঘোড়া-হরিণ-বাঘ-হাতি আরও কত কি! মনে পড়ে নাগরদোলায় প্রথম চড়ার শিহরণ? অপার রহস্যভরা জার্মানি বায়োস্কোপ? মায়াপরী? পুতুল নাচ? মনে পড়ে আপনার তখন অপূর্ব সুন্দর শৈশব। আপনার পিতা, ছোট্ট নরম তুলতুলে হাত ধরে নিয়ে এসেছিল সেই স্বপ্নের ভুবনে। সে ছিল এক ‘সব পেয়েছির দেশ’। সে মেলাতেই তো আপনি পেয়েছিলেন জীবনের প্রথম পাঁপর খাবার অপার আনন্দ। মনে পড়ে সেই পাঁপরওয়ালা লোকটির কথা? পোড়-খাওয়া বুড়ো, জীর্ণ ক্লিষ্ট মুখ; নি®প্রভ চোখ। শীর্ণ আঙ্গুলে আপনার হাতে তুলে দিয়েছিল গরম পাঁপর। ঐ বুড়োই একদিন আপনার পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহের শিশু হাতে তুলে দিয়েছিল মুচমুচে পাঁপর। গ্রাম-বাংলার সেই মেলায় এখনও সে বসে থাকে আপনার শিশুটির প্রত্যাশায়। বেচারা জানে না পাঁপরের সেই মজাটি হরণ করে নিয়েছে চুঁইংগাম। টিভির স্পাইডারম্যান-ডরিমনের কাছে জার্মান বায়োস্কোপের সকল রহস্য ফিকে হয়ে গেছে। বড় মায়া দিয়ে গড়ে তোলা গ্রাম-বাংলার লক্ষ মানুষের সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্না’র চালচিত্র ঐসব মেলা এখন নাগরিক-রুচির উপেক্ষায় মলিনপ্রায়।
এক সময় আপনার ছিল সোঁদা-মাটির গন্ধমাখা স্নিগ্ধ-নরম জীবন। সেখানে সমস্যা ছিল, সংকট ছিল---কিন্তু এমন সর্বগ্রাসী সন্ত্রাস ছিল না। চলুন না সবাই মিলেমিশে সেই দোয়েল-ফড়িং-হরিণের মায়াভরা জীবনের অপরূপ লাবণি আবিষ্কার করার চেষ্টা করি। ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তাদের নরম-শৈশবেই মেলে ধরি আবহমান-বাংলার অপার বিভা। গ্রামের শেষ সীমানায় বিশাল বটগাছটার নিচে প্রতিবছর বৈশাখী মেলা হতো। এখনও হয়। সেই বটগাছের এক চিলতে জায়গায় কত দোকান বসত। কোন কোন দোকানের ওপর চালাও থাকত না।
সেই দোকান থেকেই তো টিনের বাঁশি, আম কাটার ছুরি, রবারের গুলতি, কিংবা বাসনাওয়ালা সাবান, রেশমি ফিতে, চুলের কাঁটা আরো কত মন-হরণ করা জিনিস পাওয়া যেত যা গঞ্জের বড় দোকানেও পাওয়া যেত না। মেলার এক পাশে কৃষকরা সাজিয়ে বসতেন তরমুজ, বাঙ্গী, বিচিকলা কিংবা কেবল ক্ষেত থেকে ছিঁড়ে আনা উচ্ছে-পটল-ঢেঢ়স-চিচিঙ্গা। গজা-তিলেখাজা-জিলাপী কেনার জন্যে যেতে হতো মেলার আর এক পাশে। কাঁচের বয়ওমে রসগোল্লা ভরে হাঁটতে শুরু করতেন কিশোরের হাত ধরে ‘চল বাড়ি যেয়ে খাবি।’ হাওয়াই মিঠাই খাবার জন্য কি করুণ আকুতি। মেলার পূর্বপাড়ে একটু আড়ালে বসত জুয়া খেলার আড্ডা। বড়রাই ভিড় জমাত বেশি।
বৈশাখী মেলার সাথে নতুন বছরের যোগসূত্র হাজার বছরের। চৈত্র মাসের শেষ দিন থেকেই মেলার জন্য মন যেমন উৎফুল্ল হয়ে উঠত। ঠিক তেমনি আতঙ্কিত থাকত সবাই আকাশকে নিয়ে। উজ্জ্বল রৌদ্রের মস্ত বাতিটা দপ করে নিভে গিয়ে কুণ্ডলি পাকানো মেঘের ফাঁকে বিদ্যুৎ ঝলসে উঠবে কখন তার তো কোন বিশ্বাস নেই। ঈশান কোণের দিকে পর্ণকুটিরের বাসিন্দারা চোখ তুলে চেয়েই শঙ্কিত হয়ে উঠত এইবার লন্ড-ভন্ড করে দেবে ঘর গেরস্থালি অথবা হঠাৎ মনে পড়ত ঘরের খুঁটি বদলানো হয়নি। আবার বিনা ঘোষণায় শুরু হতো অঝোরে বরিষণ। শিলাবৃষ্টি ঝড়-ঝাপটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলে আজান আর হরিধ্বনির শব্দ ছড়িয়ে পড়ত এক গাঁ থেকে আর এক গাঁ। সকালে নরম কাদা মাটি দেখে কৃষকের বুক খুঁশিতে ভরে উঠত। লাঙ্গল জোয়াল নিয়ে ছুটে যেত মাঠে। বীজ ফেলানোর উপযুক্ত মাটি দেখে ভুলে যেত কালবৈশাখীর তান্ডবে ভেঙ্গে যাওয়া গোয়াল ঘরের কথা।
ঝড় বাদলার চিহ্নটুকু মুছে গেলেই আবার শুরু হয়ে যায় গ্রামবাসী নরনারীর সামান্য কিন্তু আনন্দময় ঘর গৃহস্থলি। গাভীর হাম্বা ডাক, মোরগ-মুরগি হাঁসের পাখা ঝাপটানি আর শিশুদের কোলাহল স্বপ্নময় হয়ে ওঠে সমস্ত বাড়ি। এই তো আমাদের গ্রামবাংলা, আমাদের বাংলাদেশ।
নববর্ষের মেলা বা উৎসবের কথা উঠলেই হালখাতার প্রসঙ্গটিই আগে চলে আসে। ব্যবসায়িরা সাড়ম্বরে আয়োজন করে হালখাতার এ আয়োজন। কি শহর, কি গঞ্জ আর অজ-পাড়াগাঁয়ের যত ছোট ব্যবসায়ীই হোক না কেন, কেউই বাদ দিত না হালখাতার উৎসব। দোকানে দোকানে ফুলপাতা আর রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো সাজসজ্জা করা হতো। ছেলে মেয়ের হাত ধরে দোকানে নতুন খাতা মহরতের মিষ্টি খাওয়া। এ দিনকে কেন্দ্র করেই বেয়াই বাড়ি দাওয়াত খাওয়া নিয়ে কত আনন্দ ফূর্তি জমে যেত মুরুব্বীদের মধ্যে। নিরানন্দ পল্লীজীবন যেন নববর্ষের আগন্তুক জাদুকরের হঠাৎ ভেলকিতে হয়ে ওঠে আনন্দনিকেতন। শহরের মানুষের মধ্যেও প্রাণচাঞ্চল্যের শুরু হতো। বৈশাখের সাথে বাঙালির এক নিবিড় সম্পর্ক তাই স্মরণ করিয়ে দেয় নববর্ষে।
সময় বদলের সমান্তরালে বদলে যায় মানুষের মন ও রুচি আর সে কারণেই সভ্যতায় আসে ক্রমোন্নতি। মানুষের শিল্পবোধ অপরিশীলতাকে করে পরিশীলিত। সামান্যও সুরুচির স্পর্শে অসামান্য রূপ নেয়। তাই দেখি এক সময়ের গেঁয়ো বলে উপেক্ষিত হস্ত ও কুটির শিল্পজাত সামগ্রী আমাদের গ্রামীণ আঙ্গিনা পেরিয়ে অধিকার করেছে শিক্ষিত নাগরিক মানুষের ড্রয়িং রুমকে। নিত্য ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রতিযোগিতায় এ সব সামগ্রীকে ছাপিয়ে আজকের আধুনিক জীবনের প্রতিদিনের আবশ্যক হিসেবে যদিও ষ্টীল, মেলামাইন এবং প্লাষ্টিক সমাদৃত ও অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে তথাপিও বাঁশ, বেত, মাটি, পাট প্রভৃতি মুছে যায়নি বাঙালির হৃদয় আঙ্গিনা থেকে। চলুন, সেই টিনের বাক্সটি খুলে দেখি না---কি কি আছে; কত পয়সা জমেছে তাতে। তারপর চলে যাই মেলায়। সেখানে সবটুকু পাওয়া যাবে অকৃত্তিমতা। চলুন, সেখানে যাই যেখানে-“নমু পাড়ায় পুজা পরব, শঙ্খ-কাঁসর বাজে বউঝিরা সব জয় জোকারে উৎসবেতে সাজে। মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসব, মেজবানী দেয় ছেলেবুড়োয় করিয়ে কলোরব।”
যেখানে কবি জসীমউদ্দীন, এস এম সুলতানের আঁকা কত শত বছরের অবিনাশী অখন্ড মানবচিত্র। সেই আনন্দধাম বৈশাখি মেলাতেই অবয়ব পায় সেই মানবিক অখন্ডতা।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক।
চলুন সেখানে চলে যাই। যেখানে পুরান গন্ধমাখা সুদূর শৈশবের হিরন্ময় পৃথিবী। যেখানে ছিল আপনার নল-খাগড়ার রঙিন বাঁশি, মনকাড়া গাব-কাঠের লাটিম, মাটির ঘোড়া-হরিণ-বাঘ-হাতি আরও কত কি! মনে পড়ে নাগরদোলায় প্রথম চড়ার শিহরণ? অপার রহস্যভরা জার্মানি বায়োস্কোপ? মায়াপরী? পুতুল নাচ? মনে পড়ে আপনার তখন অপূর্ব সুন্দর শৈশব। আপনার পিতা, ছোট্ট নরম তুলতুলে হাত ধরে নিয়ে এসেছিল সেই স্বপ্নের ভুবনে। সে ছিল এক ‘সব পেয়েছির দেশ’। সে মেলাতেই তো আপনি পেয়েছিলেন জীবনের প্রথম পাঁপর খাবার অপার আনন্দ। মনে পড়ে সেই পাঁপরওয়ালা লোকটির কথা? পোড়-খাওয়া বুড়ো, জীর্ণ ক্লিষ্ট মুখ; নি®প্রভ চোখ। শীর্ণ আঙ্গুলে আপনার হাতে তুলে দিয়েছিল গরম পাঁপর। ঐ বুড়োই একদিন আপনার পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহের শিশু হাতে তুলে দিয়েছিল মুচমুচে পাঁপর। গ্রাম-বাংলার সেই মেলায় এখনও সে বসে থাকে আপনার শিশুটির প্রত্যাশায়। বেচারা জানে না পাঁপরের সেই মজাটি হরণ করে নিয়েছে চুঁইংগাম। টিভির স্পাইডারম্যান-ডরিমনের কাছে জার্মান বায়োস্কোপের সকল রহস্য ফিকে হয়ে গেছে। বড় মায়া দিয়ে গড়ে তোলা গ্রাম-বাংলার লক্ষ মানুষের সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্না’র চালচিত্র ঐসব মেলা এখন নাগরিক-রুচির উপেক্ষায় মলিনপ্রায়।
এক সময় আপনার ছিল সোঁদা-মাটির গন্ধমাখা স্নিগ্ধ-নরম জীবন। সেখানে সমস্যা ছিল, সংকট ছিল---কিন্তু এমন সর্বগ্রাসী সন্ত্রাস ছিল না। চলুন না সবাই মিলেমিশে সেই দোয়েল-ফড়িং-হরিণের মায়াভরা জীবনের অপরূপ লাবণি আবিষ্কার করার চেষ্টা করি। ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তাদের নরম-শৈশবেই মেলে ধরি আবহমান-বাংলার অপার বিভা। গ্রামের শেষ সীমানায় বিশাল বটগাছটার নিচে প্রতিবছর বৈশাখী মেলা হতো। এখনও হয়। সেই বটগাছের এক চিলতে জায়গায় কত দোকান বসত। কোন কোন দোকানের ওপর চালাও থাকত না।
সেই দোকান থেকেই তো টিনের বাঁশি, আম কাটার ছুরি, রবারের গুলতি, কিংবা বাসনাওয়ালা সাবান, রেশমি ফিতে, চুলের কাঁটা আরো কত মন-হরণ করা জিনিস পাওয়া যেত যা গঞ্জের বড় দোকানেও পাওয়া যেত না। মেলার এক পাশে কৃষকরা সাজিয়ে বসতেন তরমুজ, বাঙ্গী, বিচিকলা কিংবা কেবল ক্ষেত থেকে ছিঁড়ে আনা উচ্ছে-পটল-ঢেঢ়স-চিচিঙ্গা। গজা-তিলেখাজা-জিলাপী কেনার জন্যে যেতে হতো মেলার আর এক পাশে। কাঁচের বয়ওমে রসগোল্লা ভরে হাঁটতে শুরু করতেন কিশোরের হাত ধরে ‘চল বাড়ি যেয়ে খাবি।’ হাওয়াই মিঠাই খাবার জন্য কি করুণ আকুতি। মেলার পূর্বপাড়ে একটু আড়ালে বসত জুয়া খেলার আড্ডা। বড়রাই ভিড় জমাত বেশি।
বৈশাখী মেলার সাথে নতুন বছরের যোগসূত্র হাজার বছরের। চৈত্র মাসের শেষ দিন থেকেই মেলার জন্য মন যেমন উৎফুল্ল হয়ে উঠত। ঠিক তেমনি আতঙ্কিত থাকত সবাই আকাশকে নিয়ে। উজ্জ্বল রৌদ্রের মস্ত বাতিটা দপ করে নিভে গিয়ে কুণ্ডলি পাকানো মেঘের ফাঁকে বিদ্যুৎ ঝলসে উঠবে কখন তার তো কোন বিশ্বাস নেই। ঈশান কোণের দিকে পর্ণকুটিরের বাসিন্দারা চোখ তুলে চেয়েই শঙ্কিত হয়ে উঠত এইবার লন্ড-ভন্ড করে দেবে ঘর গেরস্থালি অথবা হঠাৎ মনে পড়ত ঘরের খুঁটি বদলানো হয়নি। আবার বিনা ঘোষণায় শুরু হতো অঝোরে বরিষণ। শিলাবৃষ্টি ঝড়-ঝাপটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলে আজান আর হরিধ্বনির শব্দ ছড়িয়ে পড়ত এক গাঁ থেকে আর এক গাঁ। সকালে নরম কাদা মাটি দেখে কৃষকের বুক খুঁশিতে ভরে উঠত। লাঙ্গল জোয়াল নিয়ে ছুটে যেত মাঠে। বীজ ফেলানোর উপযুক্ত মাটি দেখে ভুলে যেত কালবৈশাখীর তান্ডবে ভেঙ্গে যাওয়া গোয়াল ঘরের কথা।
ঝড় বাদলার চিহ্নটুকু মুছে গেলেই আবার শুরু হয়ে যায় গ্রামবাসী নরনারীর সামান্য কিন্তু আনন্দময় ঘর গৃহস্থলি। গাভীর হাম্বা ডাক, মোরগ-মুরগি হাঁসের পাখা ঝাপটানি আর শিশুদের কোলাহল স্বপ্নময় হয়ে ওঠে সমস্ত বাড়ি। এই তো আমাদের গ্রামবাংলা, আমাদের বাংলাদেশ।
নববর্ষের মেলা বা উৎসবের কথা উঠলেই হালখাতার প্রসঙ্গটিই আগে চলে আসে। ব্যবসায়িরা সাড়ম্বরে আয়োজন করে হালখাতার এ আয়োজন। কি শহর, কি গঞ্জ আর অজ-পাড়াগাঁয়ের যত ছোট ব্যবসায়ীই হোক না কেন, কেউই বাদ দিত না হালখাতার উৎসব। দোকানে দোকানে ফুলপাতা আর রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো সাজসজ্জা করা হতো। ছেলে মেয়ের হাত ধরে দোকানে নতুন খাতা মহরতের মিষ্টি খাওয়া। এ দিনকে কেন্দ্র করেই বেয়াই বাড়ি দাওয়াত খাওয়া নিয়ে কত আনন্দ ফূর্তি জমে যেত মুরুব্বীদের মধ্যে। নিরানন্দ পল্লীজীবন যেন নববর্ষের আগন্তুক জাদুকরের হঠাৎ ভেলকিতে হয়ে ওঠে আনন্দনিকেতন। শহরের মানুষের মধ্যেও প্রাণচাঞ্চল্যের শুরু হতো। বৈশাখের সাথে বাঙালির এক নিবিড় সম্পর্ক তাই স্মরণ করিয়ে দেয় নববর্ষে।
সময় বদলের সমান্তরালে বদলে যায় মানুষের মন ও রুচি আর সে কারণেই সভ্যতায় আসে ক্রমোন্নতি। মানুষের শিল্পবোধ অপরিশীলতাকে করে পরিশীলিত। সামান্যও সুরুচির স্পর্শে অসামান্য রূপ নেয়। তাই দেখি এক সময়ের গেঁয়ো বলে উপেক্ষিত হস্ত ও কুটির শিল্পজাত সামগ্রী আমাদের গ্রামীণ আঙ্গিনা পেরিয়ে অধিকার করেছে শিক্ষিত নাগরিক মানুষের ড্রয়িং রুমকে। নিত্য ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রতিযোগিতায় এ সব সামগ্রীকে ছাপিয়ে আজকের আধুনিক জীবনের প্রতিদিনের আবশ্যক হিসেবে যদিও ষ্টীল, মেলামাইন এবং প্লাষ্টিক সমাদৃত ও অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে তথাপিও বাঁশ, বেত, মাটি, পাট প্রভৃতি মুছে যায়নি বাঙালির হৃদয় আঙ্গিনা থেকে। চলুন, সেই টিনের বাক্সটি খুলে দেখি না---কি কি আছে; কত পয়সা জমেছে তাতে। তারপর চলে যাই মেলায়। সেখানে সবটুকু পাওয়া যাবে অকৃত্তিমতা। চলুন, সেখানে যাই যেখানে-“নমু পাড়ায় পুজা পরব, শঙ্খ-কাঁসর বাজে বউঝিরা সব জয় জোকারে উৎসবেতে সাজে। মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসব, মেজবানী দেয় ছেলেবুড়োয় করিয়ে কলোরব।”
যেখানে কবি জসীমউদ্দীন, এস এম সুলতানের আঁকা কত শত বছরের অবিনাশী অখন্ড মানবচিত্র। সেই আনন্দধাম বৈশাখি মেলাতেই অবয়ব পায় সেই মানবিক অখন্ডতা।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক।
No comments:
Post a Comment