দুঃখবিলাসী নাসির খান - NEWS TODAY FARIDPUR

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

Thursday, February 8, 2018

দুঃখবিলাসী নাসির খান

শরীফ খান, নিউজটুডেফরিদপুরঃ
একটি সাধারন গল্প কিন্তু অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। দুঃখ টা যে একটা উপভোগের বিষয় সেটাও খুব ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন বাবু চরিত্রের মাধ্যমে। একটি নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবার কে নিয়ে লেখা এই গল্প। মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা না পারে খুব ভালভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে না পারে ভিক্ষার থালা নিয়ে পথে বসতে। এদের আছে শুধু বুক ভরা সুখ-দুক্ষের গল্প। গল্প করেই পার করে দিতে পারে সারাটা জীবন।
ভাই বোনের অসারাণ মিলবন্ধন দেখিয়েছে বাবু, পারুল, মনি এবং রুবির মধ্যে। তবুও বলতে হয় হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন সমান হয় না তেমনি পরিবারের সব সন্তান এক রকম হয়না। বাবু যেমন সবসময় ভালো ভালো কাজ করে আবার তার আপন বড় ভাই মনি জড়িয়ে পরে অবৈধ ব্যাবসার সাথে। যদিও লেখক স্পষ্ট করে বলেননি মনি আসলে কি করতো? তবুও বোঝা যায় যেহেতু মনি একবার ২ দিনের জন্য জেল খাটে। মনিদার জন্য খুব কষ্ট লেগেছে। বাবু যেমন তার পরিবারের দিকে নজর রাখে আবার তার বন্ধু আসাদের পরিবারের খোজও নেয় নিয়মিত। বাবু একদিন টিউশনির বেতন পেয়ে বাজার করে বাসায় ফিরিছিল রিকশায় চড়ে। রিকশা চালকের সাথে কথার এক পর্যায়ে সে জানতে পারে তার মেয়ের জন্য একটা বই কিনতে হবে। বাবু সেই বই কেনার জন্য ৫০০ টাকা দেয়। বাকি টাকা থেকে বন্ধু আসাদের পরিবারের জন্য বাজার করে নিয়ে যায়। অথচ নিজের ঘরেই নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তবুও বাবু এটা করে যায় কারন সে মনে করে এটা তার দায়বদ্ধতার মধ্যে পরে।
হুমায়ূন আহমেদ এর একটা উক্তি আছে “ পৃথিবীতে অনেক খারাপ পুরুষ আছে কিন্তু একজনও খারাপ বাবা নেই”। এই কথার যথার্থ প্রমান পাওয়া যায় এই গল্পরের মধ্যে।
মনি- বাবুর বাবা একজন কেরানী হলেও সন্তান দের ছোট খাটো কোনো ইচ্ছা অপূরণ রাখে না। আবার রুবি আপার শ্বশুর তিনিও একজন বাবা এবং সে বাড়ির সবচেয়ে ভালো মানুষ সেই। অন্য দিকে বেশ গম্ভীর দেখতে নিলুর বাবা। কিন্তু তার ভেতরেও একটা কোমল হৃদয় আছে না হলে নিলু এতোটা স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারতো না।

মা মানেই সস্তানের জন্য পৃথিবী। মা কতো কষ্ট সহ্য করেও সংসার করে যান সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে। তাই মায়ের সাথে তুলনা হয় না কোনো কিছুর। বাবু দুই বোন যখন মা হলো তখন কতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে শুধু সন্তানের জন্য ঝগড়া বেঁধে গেলো। একটা সময় কতোই না ভাব ছিলো তাদের ভিতরে। কখনো কখনো সন্তানের কাছে মা হয়ে যায় বোঝা, পর্যায় ক্রমে একেক সন্তানের বাড়িতে দিন রাত কাটাতে হয়।
শাওন পারতো তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে ঘর বাধতে। সেটা না করেও যে ভালবাসার মানুষের জন্য অন্য কিছু ভাবা যায় সেটা দারুন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। সামদানী অদ্ভুত এক নাম আগে শুনিনি কখনো। বারবার তার চেহারা মনে করার চেষ্টা করেছি। ভালো কাটুক তাদের নতুন সংসার।
নূরী ফুপুর জন্য খুব কষ্ট লাগে। নূরী ফুপুর কষ্টটা আমাদের সাধারনের জন্য বোঝা সম্ভব না। তার টিভি দেখতে চাওয়াটা মায়ায় ভরপুর।
লেখক অসাধারণ ব্যালেন্স নিয়ে গল্পটা লিখেছেন জন্ম মৃত্যুর যে খেলা তিনি দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। গল্পে দুই জনের জন্ম হয়েছে আবার দুই জনের মৃত্যুও হয়েছে। আবার একই সাথে তিনি জন্মমৃত্যু দেখিয়েছেন। দেখিয়েছেন সুখ দুঃখ হাসি কান্না। উচু শ্রেনির মানুষ যেমন আছে এখানে তেমনি রুনারাও বেঁচে আছে আমাদের এই সমাজে। টগরের সাথে দুষ্টুমিটা আমি খুব মিস করেছি। মিস করেছি মুনিয়ার হাতের রান্না। শামিমদের মতো মানুষ এই সমাজের কলঙ্ক। সারাদিন খেটেখুটে মানুষ তার পরিবারের জন্য এটা ওটা কেনে, টাকা জমায় আর এই শামিমরা এক নিমিষেই সেই সেখানে ভাগ বসায়। ওদের কে পেলে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা উচিৎ।

লেখক খুব ভালো লিখেছেন তার প্রথম বই “একদিন সূর্যের দিন” বইটিতে। কিন্তু দুই একটা ভুল না ধরলে কেমন হয়? মজার বিষয় হচ্ছে আমি কোনো দুর্বলতা খুজে পাইনি তার লেখার মধ্যে। বরং পেয়েছি একজন অভিজ্ঞ লেখকের স্পর্শ। এতো চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যা পাঠকের মন কাড়বে। দুঃখবিলাসী নাসির খান এর “একদিন সুর্যের দিন” এর জন্য শুভ কামনা রইলো।

উদিয়মান সারাজাগানো তরুণ লেখক নাসির খান এর জনপ্রিয় উপন্যাস "একদিন সূর্যের দিন"।

প্রকাশিত হয়েছে মননশীল ও প্রগতিবাদী প্রকাশনা সংস্থা "রোদেলা প্রকাশনী" থেকে।

বইটির মূদ্রিত মূল্য মাত্র ২০০/-। অমর একুশে বই মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত রোদেলা প্রকাশনীর স্টল ৪৬২,৪৬৩,৪৬৪,৪৬৫ তে বইটি পাচ্ছেন ২৫% ডিসকাউন্টে মাত্র ১৫০/- টাকায়।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Pages