নিহত মিরনের স্বজনদের আহাজারি। |
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের হাটখোলারচরের বটতলা নামক স্থানে ডাকাত সন্দেহে গ্রামবাসীর গনপিটুনিতে নিহত দুই যুবক নিরাপরাধ ছিল বলে দাবি করেছে তাদের পরিবারের সদস্যরা। আর একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দুঃখের সাগরে ডুবতে বসেছেন মিরন এর বাবা-মা। নিহত মিরনের বাড়িতে এখন শুরু কান্নার রোল। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে গোটা এলাকার পরিবেশ। তার শিশু কন্যা জানে না আর কোনো দিন তার বাবা ফিরবে না তার কাছে। স্মৃতি হিসেবে বাবার ছবিটিই একমাত্র সম্বল তা না বুঝলেও বড়দের আহাজারির সাথী হচ্ছে সে।
বোয়ালমারী উপজেলার কাদীরদী বাজারের ব্যবসায়ী মিলন রোববার বিকেলে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে যায় একই উপজেলার ময়না ইউনিয়নের হাটখোলারচর এলাকায়। রাতে ফেরার পথে ডাকাত প্রতিরোধে পাহারারত গ্রামবাসীর চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হয় সে ও তার দুই সঙ্গী। একপর্যায়ে গ্রামবাসীর রোসানলে পড়ে চরম জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হয় মিলন ও ফরহাদকে।
এদিকে ডাকাত আতংকে পাহারার ব্যবস্থা হলেও এখন পর্যন্ত ডাকাতদের আটক করা সম্ভব হয়নি। বরং পাহারাদারদের পিটুনিতে নিহত ও হয়রানী’র শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর। মিলন সমাজবিরোধী কোনো কাজে জড়িত ছিল না বলে দাবি তার নিজ গ্রামের বাসিন্দাদের। মিলনের মর্মান্তিক এ মৃত্যুর জন্য দায়ীদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেছে তার স্ত্রী ও স্বজনরা। এমন মর্মান্তিক ঘটনা আর দেখতে চান না চাঁদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোছাঃ শামসুন্নাহার মুহিতও।
বিভিন্ন গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে ডাকাতরা হানা দিচ্ছে এমন আতংক থাকলেও বাস্তবে পুরোটাই গুজব। কোথাও কোনো ডাকাতির ঘটনার খবর পাওয়া না গেলেও গ্রামবাসী গুজবে কান দিয়ে নির্ঘুম রাত যাপন করছে।
আইন শৃংখলা রক্ষায় সন্দেহজনক বা অচেনা আগুন্তককে মারপিট না করে আটক করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সোপর্দের কথা বলেছেন জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, রোববার রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের হাটখোলারচরের বটতলা নামক স্থানে ডাকাত সন্দেহে দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে গ্রামের পাহারাদাররা। রোববার রাত ১১ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, চাঁদপুর ইউনিয়নের চতর গ্রামের শহীদ মেম্বারের ছেলে মিলন (৩০) ও মোতালেব ফকিরের ছেলে ফরহাদ (২৮)।
মধুখালী থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম নবী, ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রাতে বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নে হাটখোলারচর এলাকায় সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে আটক করে এলাকাবাসী গণপিটুনি দিলে তাদের মৃত্যু হয়। পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পঠিয়েছে, একই সাথে ওই স্থান থেকে দুইটি ধারলো অস্ত্র ও নিহতদের ব্যবহৃত মটরসাইকেল জব্দ করেছে।
হঠাৎ করে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত আতঙ্কের গুজবের কারনে অন্যান্য স্থানের মতো ওই গ্রামেও রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছিল এলাকাবাসী। রোববার রাতে ঘোষপুর-বোয়ালমারী আঞ্চলিক সড়কে হাটখোলারচর এলাকায় সড়কের স্পিড ব্রেকারে ধাক্কা খেয়ে মোটর সাইকেল আরোহী ২ যুবক রাস্তায় ছিটকে পড়ে। লোকজন তাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে যায়। এ সময় তাদের কাছে দুইটি রামদা পাওয়া গেলে তাদের ডাকাত সন্দেহে পিটুনি দেওয়া হয় বলে ময়না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজম মৃধার দাবি।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. জামিল হাসান বলেছেন, ডাকাতির ঘটনা পুরোটাই গুজব। যেখানেই ডাকাতির কথা জানা গেছে, সেখানেই পুলিশের একাধীক টিম গিয়ে তদন্ত করে ডাকাতির ঘটনার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। ফরিদপুরের আইন শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীল পরিস্থিতি নষ্ট করার জন্য এবং কুখ্যাত একজন রাজাকারের রায় কার্যকরের আগে ফরিদপুরে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে একটি কুচক্রী মহল। পুলিশ সর্বদাই ততপর রয়েছে বিশেষ করে পবিত্র রমযান ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জেলা পুলিশ, র্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা জনগনের নিরাপত্তায় কাজ করছে। জনগনকে গুজবে কান দিয়ে আতঙ্কিত কিংবা ভয় না পেয়ে সব সময় পুলিশের সহায়তা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ এই কর্মকর্তা। #
নিউজ টুডে ফরিদপুর, ৬ জুলাই, ২০১৫।
No comments:
Post a Comment