ফরিদপুর জোড়া খুন, নেপথ্যে পরকীয়া, শিক্ষিকার স্বামী পুলিশ হেফাজতে, লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন। - NEWS TODAY FARIDPUR

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

Monday, May 7, 2018

ফরিদপুর জোড়া খুন, নেপথ্যে পরকীয়া, শিক্ষিকার স্বামী পুলিশ হেফাজতে, লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন।

নিউজটুডেফরিদপুরঃ
ফরিদপুর শহরের দক্ষিন ঝিলটুলি এলাকার একটি বাসা থেকে সরকারী সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাজিয়া বেগম(৩৬) ও সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক হাসান (৩৮) এর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে ওই বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

নিহত কলেজ শিক্ষিকা সাজিয়া বেগম ফরিদপুরের সরকারী সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি দুই ছেলে নিয়ে এই বাসার নিচতলার একটি ফাটে থাকতেন। তার স্বামী শেখ শহিদুল ইসলাম ঢাকায় মটর পার্টস এর ব্যবসা করেন। তাদের বাড়ি রাজধানীর সুত্রাপুর থানার বানিয়া নগর এলাকায়।

ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক হাসানের গ্রামের বাড়ি যশোর জেলার শার্শা উপজেলার নাভারন গ্রামে। তার বাবার নাম মিজানুর রহমান। ফারুক থাকতেন ঢাকার আগারগাও এলাকার ৩৮ নম্বর বাসায়। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মেজ ফারুক হাসান। ফারুক সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে লিগ্যাল মেটারস ডিভিশনে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. শামসুল হক।


ফরিদপুর কোতয়ালী থানার অফিসার ইন চার্জ এএফএম নাসিম ইত্তেফাককে বলেন, বাড়ির মালিক পুলিশকে খবর দিলে আমরা এসে লাশ উদ্ধার করি। দক্ষিন ঝিলটুলি এলাকার নুর ইসলাম এর বাড়ির নিচ তলার একটি ফাট থেকে লাশ দুইটি উদ্ধার করা হয়।

শিক্ষিকার লাশ দরজার পাশে রক্তাত্ত অবস্থায় এবং ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ ফ্যানের হুকের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার বুকেও আঘাতের ক্ষত রয়েছে।

লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত ও  ময়না তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বিস্তারিত বলতে পারবো।

এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাজিয়ার স্বামী ব্যাবসায়ী শেখ শহিদুল ইসলামকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। পুলিশ সব কয়টি এ্যাঙ্গেলে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে , দেখা যাক তদন্ত শেষে কোথায় গিয়ে দাড়ায় ফলাফল। তবে তার কাছ থেকে কোন তথ্য পাওয়া গেছে কিনা সে তথ্য এখনই বলতে রাজি হন নি তিনি। জানান তদন্ত শেষে বলা যাবে।

ওসি নাসিম আরো জানান, প্রাথমিক তদন্তে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এই দুই জন পূর্ব পরিচিত ছিলেন, সেটা প্রেমের সম্পর্ক হতে পারে। আর একটি বিষয় ফারুক হাসান এই বাসায় ভাড়া নিয়েছিলেন তার পরিচয় গোপন করে।

ফাট থেকে রক্তমাখা ছুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই ঘটনায় মামলা দায়ের এর প্রস্তুতি চলছে। তবে মামলা যখনই দায়ের হোক পুলিশ তার কাজ শুরু করে দিয়েছে।

ফাটের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ প্রথম দেখেন বাড়ির মালিকের ছেলে ডেভিড হাসান। তিনি বলেন, বলেন, আজ রাজেন্দ্র কলেজের অভিষেক অনুষ্ঠানের কনসার্ট ছিল। রাত ১১ টার দিকে কনসার্ট শেষে বাড়ি ফিরে নিচ তলার ওই ফাটের দরজা খোলা দেখতে পাই। দরজার ফাকা দিয়ে দেখতে পাই ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ ঝুলছে। আমি সাথে সাথেই পুলিশকে জানাই। পুলিশ এসে লাশ উদ্বার করে।

ডেবিড আরো জানান, নিহত কলেজ শিক্ষিকা ১ বছর আগে এই বাসা ভাড়া নেন। তিনি তার দুই সন্তান নিয়ে বাসায় থাকতেন। তার স্বামী ঢাকায় ব্যাবসা করে বিধায় মাঝে মাঝে এই বাসায় আসতেন। ঘটনার দিন তার স্বামী ফরিদপুরের বাসাতেই ছিলেন।

আর ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক ১ মাস আগে ভাড়া নেন। ১ মাস আগে বাসা ভাড়া নিলেও তিনি থাকতেন না। দুই দিন আগে তিনি বাসায় এসে উঠেছেন।

নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক হাসান এর বন্ধু সাংবাদিক মুক্তাদির রশিদ ইত্তেফাককে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনই দুই জনের সাথে পরিচয় ছিল। একটা সময় তাদের বিয়েও করার কথা ছিল। কিন্তু সাজিয়া শেষ পর্যন্ত বিয়ে করবে না বলে জানালে তাদের মাঝে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সাজিয়া বছর খানেক আগে আবার ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে।

ফারুক হাসান এর ভাই পুলিশ কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন বলেন, সাজিয়া আর ফারুকের সাথে কোন সম্পর্ক ছিল কিনা সেটা আমরা পরিবারের কেউ জানতাম না। ওহ এভাবে ফরিদপুর আসবে সেটাও জানা ছিল না আমাদের। তিনি বলেন, ঘটনা যাই ঘটুক, ভাইকে তো হারিয়েছি, এখন সত্যটা জানাতে চাই।  আসল ঘটনাটা কি কিভাবে হল সব কেনই হল, আর কেউ দায়ী কিনা এর জন্য তার শাস্তিও চাই।

নিহত শিক্ষিকা সাজিয়া’র স্বামী শেখ মো. শহিদুল ইসলাম ও ফুফু আফসারী আহমেদ জানান, অন্যান্য দিনের মত রোববারও যথারীতি কলেজে যান সাজিয়া। বিকাল চারটায় স্বামীর সাথে ফোনে কথা হলে সাজিয়া বাসায় ফিরছেন বলে জানান। এরপর থেকে আর ফোন রিসিভ করেনি সে। রাত এগারোটার দিকে প্রথম ফাটের মো. ফারুক হোসেনের ফাটে ফারুক হাসানকে ঝুলন্ত ও সাজিয়াকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেয়া যায়। উভয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

সরকারী সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুলতান মাহামুদ বলেন, ম্যাডাম রবিবার কলেজে গিয়েছিলেন। দায়িত্ব মেষ করে সাড়ে ৩ টার দিকে কলেজ থেকে বাসার উদ্যেশে বের হয়ে আসেন তিনি। এর পর সন্ধ্যার পরে জানতে পারি তাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে আমরাও বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করে না পেয়ে থানায় জানাই।

তিনি জানান, কলেজের শিক্ষিকার এমন নির্মম মৃত্যুতে শোক পালন করছে কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। একাদশ শ্রেনীর বার্ষিক পরীক্ষার আজকের তারিখের (সোমবার) সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। মানুষের এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। যে বা যারাই সাজিয়া হত্যার সাথে জড়িত থাকুক না কেন তাদের অতিসত্বর আইনের আওতায় আনার দাবী জানাই আমরা।

এদিকে সোমবার বিকেলে সাজিয়া ও ফারুকের মরদেহর ময়নাতদন্ত শেষ করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকবৃন্দ। #

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Pages